1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

সুমাইয়া-তাসিবদের ‘দুঃসাহসিক’ যাত্রা ও পুলিশের মানবিক পদক্ষেপ।

  • Update Time : শনিবার, ২৭ জুন, ২০২০
  • ১৪৬ Time View

প্রত্যয় ডেস্ক রিপোর্ট :সুমাইয়া বয়স ১৩ বছর। বেশ কয়েক বছর আগে তার মা ও বাবার মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর সুমাইয়ার বাবা ও মা পুনরায় বিয়ে করে নতুন করে সংসার পাতেন। মা-বাবা জীবিত থাকতেও ‘অনাথ’ সুমাইয়ার ঠাঁই হয় নানীর কাছে। নানী বয়স্ক মানুষ। এই নাতনিকে নিয়ে চলে যায় সংসার। সুমাইয়াকে ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেওয়া হয়।

মাদ্রাসায় সুমাইয়ার একই এলাকার এক সহপাঠী আছে। নাম তার তাসিব (১৩)। তাসিবের গল্পটাও অনেকটা সুমাইয়ার মতোই। কয়েক বছর আগে তাসিবের মা মারা গেছেন। এরপর বাবা আরেকটি বিয়ে করেছেন। এরপর থেকেই সৎ মায়ের সংসারেই বেড়ে উঠছে তাসিব।

করোনার কারণে গত কয়েক মাস ঘরবন্দী থেকে থেকে সুমাইয়া ও তাসিব অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সুমাইয়ার নানী অসুস্থ। মা-বাবাও কাছে নাই। ওদিকে, মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত তাসিব। চাইলেই নিজেদের অবুঝ মনের চাওয়া-পাওয়ার কথাও কাউকে বলতে পারে না তারা। কিন্তু এভাবে বন্দী থেকে নাভিশ্বাস অবস্থা।

গত ২২ তারিখ সকালে চুপিসারে নানীর লকার থেকে কয়েক হাজার টাকা বের করে নেয় সুমাইয়া। এরপর তাসিবকে সাথে নিয়ে ঘর বের হয় দুজন। রিকশা করে সারাদিন ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায় তারা। অনেকদিন পরে মুক্ত পরিবেশ পেয়ে সুমাইয়া-তাসিব যেন মুক্ত পাখি। দিন পেরিয়ে রাত। কিন্তু তাদের ঘরে ফেরার তাড়া নেই। রাতের বেলা রিকশা যোগে তারা দুজন সদরঘাটে এসে পৌঁছায়। ঘাটে থামানো লঞ্চ দেখে তারা তাতে উঠে পরে। এমন লঞ্চ আগে কখনো দেখা হয়নি তাদের। তাই উৎসুক মনে ঘুরে ঘুরে লঞ্চ দেখতে থাকল দুজন। কিন্তু লঞ্চ যে একটু পরেই ঘাট থেকে ছেড়ে যাবে, সেকথা তাদের মাথায়ই আসেনি। অনেকক্ষণ পরে তারা বুঝতে পারল, লঞ্চ ঘাট থেকে ছেড়ে চলতে শুরু করেছে। এখন তারা নদীর মধ্যে। অনাকাঙ্ক্ষিত এই পরিস্থিতিতে পড়ে তারা কিছুটা ভয় পেয়ে গেল। কিন্তু কাউকে কিছু বলতেও পারছে না।

রাতের বেলা যাত্রীরা যে যার স্থানে ঘুমিয়ে পড়লেন। কিন্তু তাদের দুজনের জায়গা নেই। কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে তারা লঞ্চের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পায়চারি কররে লাগল। এমন অবস্থা দেখে ইয়াসিন (১৬) ও ইব্রাহিম (১৬) নামের লঞ্চের অপর দুই যাত্রী তাদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে। তখন নিজেদের সমস্যার কথা খুলে বলে তারা। ইয়াসিন ও ইব্রাহিমের কাছ থেকে তারা জানতে পারে, বর্তমানে শরীয়তপুরগামী লঞ্চে আছে তারা। এই লঞ্চ সকালে শরীয়তপুরের নড়িয়া গিয়ে থামবে। কথায় কথায় তাদের চারজনের মধ্যে বেশ ভাব হয়ে গেল। ইব্রাহিম ও ইয়াসিন তাদের জানায়, তাদের বাসা ঢাকার কেরানীগঞ্জ। তাদের মামা বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া থানায়। সকালে নড়িয়া পৌঁছে আবার বিকেলে লঞ্চে করে ঢাকায় ফিরে আসবে তারা। সুমাইয়া ও তাসিব চাইলে তাদের সঙ্গী হতে পারে। অন্য উপায় না পেয়ে তারা দুজন এই প্রস্তাবে রাজী হয়ে গেল।

সকালে তারা চারজন নড়িয়ার পৌঁছে সারাদিন ঘুরে বেড়িয়ে কাটিয়ে দেয়। এরপর ২৩ জুন বিকেলের দিকে তারা নড়িয়া থেকে ঢাকাগামী লঞ্চে ওঠে। রাত আটটায় লঞ্চ এসে সদরঘাটে থামে। কিন্তু এই পুরো সময়টা তাদের খুব ভালো কেটেছে। শহরের বদ্ধ পরিবেশের বাইরে এমন স্নিগ্ধ পরিবেশ তাদেরকে মুগ্ধ করেছে। এদিকে, সুমাইয়ার কাছে আরও হাজার পাঁচেক টাকা আছে। এবার তারা বুদ্ধি আটল, এই টাকা দিয়ে কুয়াকাটা ঘুরে এলে মন্দ হয় না। যেই ভাবনা, সেই কাজ। এবার তারা বরিশালগামী একটি লঞ্চে উঠে পড়ে। পরের অর্থাৎ ২৪ তারিখ সকালে তারা বরিশাল পৌঁছায়। লঞ্চ থেকে নেমে বাসযোগে তারা কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। কিন্তু বাসের সমস্যার কারণে পথেই নেমে যেতে হয়। এরপর ভেঙে ভেঙে বিভিন্ন যানবাহন ব্যবহার করে কুয়াকাটা পৌঁছায় তারা।

কুয়াকাটায় পৌঁছাতে রাত হয়ে গেছে। অপরিচিত একটি জায়গা। এবার কোথায় থাকবে তারা? থাকার জন্য হোটেল খুঁজতে শুরু করল। কিন্তু লকডাউনের কারণে অনেক হোটেল বন্ধ। আবার শিশু হওয়ার কারণে কোনো কোনো হোটেল তাদের থাকতে দিতে চাইলো না। রাত গভীর হয়ে গেলে একটি হোটেলের এক কর্মচারী মানবিক কারণে তাদের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দেন। এদিকে, পথে আসতে আসতে ভাড়া দিতে দিতে তাদের সাথে থাকা টাকা ফুরিয়ে যায়।

রাতে ওই হোটেলে থাকার পর ২৫ জুন সকাল থেকে তারা কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকতসহ আশপাশের এলাকায় ঘুরতে থাকে। প্রকৃতির রূপ-লাবণ্য তাদের মুগ্ধ করে। সমুদ্রে নেমে গোসল করে তারা। ওয়াটার বোটে চড়ে। কিন্তু সাথে টাকা না থাকায় সারাদিনে কিছু খেতে পারেনি তারা। অন্যদিকে,ওয়াটার বোটের ভাড়াও বাকি। আবার ঢাকায় ফেরত যাওয়ার টাকাও নেই। বাধ্য হয়ে বিকেল বেলা সাথে থাকা মোবাইল ফোন ও ট্যাব বিক্রির জন্য ক্রেতা খুঁজতে শুরু করে তারা।

ওই সময়ে সমুদ্র সৈকতে মহিপুর থানা পুলিশের একটি দল টহল দিচ্ছিল। সেখানে চার শিশুর মোবাইল ও ট্যাব বিক্রির জন্য ক্রেতা খুঁজতে দেখে পুলিশের কাছে বিষয়টি অস্বাভাবিক লাগে। পুলিশের ওই দলটি তাদের দিকে এগিয়ে যেতে দেখে শুরুতে তারা কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। পুলিশ সদস্যগণ তাদের অভয় দিয়ে সৌহার্দপূর্ণ ও আন্তরিক আচরণ করায় তারা সাহস ফিরে পায়। সমস্যার কথা জেনে পুলিশ তাদের মহিপুর থানায় নিয়ে আসে। সারাদিন অভুক্ত থাকায় থানায় এনে তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করে পুলিশ। এরপর বিস্তারিত ঘটনা জেনে এবং তাদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করে কেরানীগঞ্জ ও কামরাঙ্গীরচর থানার খবর দেওয়া হয়। মহিপুর থানার খবর পেয়ে ওই চার শিশুর পরিবারের সদস্যদের খুঁজে বের করে পুলিশ। এরপর তথ্য যাচাই-বাচাই করে ওই শিশুদের সঠিক অভিভাবক খুঁজে বের করা হয়।

এদিকে, রাতের বেলা থানায় নারী ও শিশু বান্ধব ডেস্কের মাধ্যমে ওই চার শিশুর থাকা ও খাওয়ার সুব্যবস্থা করে পুলিশ। ২৬ জুন শুক্রবার বিকেলে শিশুদের অভিভাবকগণ থানায় পৌঁছলে, সন্তানদেরকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ পুলিশের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নিরাপদে সন্তানদের ফেরত পেয়ে অভিভাবকেরা আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। সন্তানদের পুনরায় তাদের কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ পুলিশের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপণ করেন।
সর্বদাই জনগণের পাশে, বাংলাদেশ পুলিশ।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..